বর্তমান সময়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহারকারীরা নিজের ফোনকে আরও শক্তিশালী ও কাস্টমাইজড করতে চান। তবে অনেকেই জানেন না, রুট (Root) এবং কাস্টম রম (Custom ROM) কীভাবে কাজ করে ও এগুলো থেকে কী সুবিধা পাওয়া যায়। রুট মানে হলো ফোনের সিস্টেমের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাওয়া, আর কাস্টম রম হলো অপারেটিং সিস্টেমের এমন একটি পরিবর্তিত সংস্করণ যা অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েডের চেয়ে বেশি ফিচার ও পারফরম্যান্স দেয়। আজ আমরা জানব রুট ও কাস্টম রম ইনস্টল করার ৭টি দারুণ সুবিধা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রুট ও কাস্টম রম কী এবং কেন ব্যবহার করবেন
রুট করা মানে হলো আপনার ফোনের সিস্টেম ফাইল ও কোর সেটিংসের ওপর পুরো অ্যাক্সেস পাওয়া। সাধারণভাবে, ফোনের নির্মাতা কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীদের কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখে, যাতে তারা ভুল করে কোনো সিস্টেম পরিবর্তন করতে না পারে। কিন্তু ফোন রুট করলে আপনি সেই সীমাবদ্ধতা ভেঙে ফেলতে পারেন।
অন্যদিকে, কাস্টম রম হলো অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যারের পরিবর্তিত সংস্করণ, যেখানে অতিরিক্ত ফিচার, পারফরম্যান্স উন্নয়ন, এবং নতুন থিম ও ইন্টারফেস যোগ করা হয়। অনেক সময় পুরানো ফোনে নতুন অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন অফিসিয়ালি না এলেও কাস্টম রম দিয়ে সেই ভার্সন ব্যবহার করা যায়।
রুট ও কাস্টম রম ইনস্টলের ৭টি প্রধান সুবিধা
রুট এবং কাস্টম রম ব্যবহারের ফলে আপনি এমন অনেক ফিচার পাবেন, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য বন্ধ থাকে। নিচে সেই গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো দেওয়া হলো:
১. সিস্টেম কাস্টমাইজেশন: আপনি আপনার ফোনের থিম, আইকন, ফন্ট, এমনকি বুট অ্যানিমেশন পর্যন্ত পরিবর্তন করতে পারবেন।
২. বাড়তি পারফরম্যান্স: কাস্টম রম ইনস্টল করলে ফোনের র্যাম ম্যানেজমেন্ট উন্নত হয়, ফলে ফোনের গতি বেড়ে যায়।
৩. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ মুছে ফেলা: রুট করার পর আপনি ফোনের বিল্ট-ইন বোল্টওয়্যার অ্যাপ ডিলিট করতে পারবেন।
৪. ব্যাটারি ব্যাকআপ বৃদ্ধি: কিছু কাস্টম রমে ব্যাটারি সেভিং মোড থাকে, যা ব্যাটারি লাইফ দীর্ঘায়িত করে।
৫. নতুন অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন ব্যবহার: অফিসিয়াল আপডেট না পেলেও কাস্টম রম দিয়ে সর্বশেষ অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন চালানো সম্ভব।
৬. উন্নত গেমিং পারফরম্যান্স: কিছু রম গেমিং-এর জন্য অপ্টিমাইজ করা থাকে, যা গ্রাফিক্স পারফরম্যান্স বাড়ায়।
৭. অতিরিক্ত টুলস ও ফিচার: রুট করা ফোনে আপনি Titanium Backup, Magisk ইত্যাদি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন যা সাধারণভাবে সম্ভব নয়।
এইসব সুবিধা ব্যবহার করে পুরানো ফোনকেও নতুনের মতো পারফরম্যান্সে রূপান্তর করা যায়।
সতর্কতা ও করণীয় বিষয়
রুট এবং কাস্টম রম ইনস্টল করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
-
ওয়ারেন্টি বাতিল হতে পারে: বেশিরভাগ কোম্পানি রুট করা ফোনের ওয়ারেন্টি বাতিল করে দেয়।
-
ডেটা ব্যাকআপ নিন: রম ফ্ল্যাশ করার আগে সব ডেটা ব্যাকআপ করে রাখুন, কারণ ইনস্টলের সময় ডেটা মুছে যেতে পারে।
-
সঠিক ফাইল ডাউনলোড করুন: ভুল রম ফ্ল্যাশ করলে ফোন “ব্রিক” হয়ে যেতে পারে।
-
বিশ্বস্ত গাইড অনুসরণ করুন: XDA Developers বা অফিসিয়াল কাস্টম রম ওয়েবসাইট থেকে নির্দেশনা নিন।
সতর্কভাবে করলে রুট ও কাস্টম রম আপনার ফোনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে এবং আপনাকে আরও উন্নত অ্যান্ড্রয়েড অভিজ্ঞতা দেবে।
রুট ও কাস্টম রম ইনস্টল করা প্রযুক্তি প্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ উপায় ফোনকে নতুনভাবে ব্যবহার করার। আপনি যদি ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং সঠিক গাইড অনুসরণ করেন, তাহলে পুরানো ফোনকেও অসাধারণ পারফরম্যান্সে রূপান্তর করা সম্ভব। তবে সবসময় মনে রাখবেন, নিরাপদ উৎস থেকে ফাইল ডাউনলোড করুন এবং ব্যাকআপ নিয়ে রাখুন।