কম্পিউটার আধুনিক প্রযুক্তির এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। এটি মানুষের কাজকে দ্রুত, নির্ভুল ও সহজ করে তুলেছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, একটি কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে।
কম্পিউটারের কাজের পেছনে রয়েছে একটি সুসংগঠিত ধাপভিত্তিক প্রক্রিয়া। এই ধাপগুলো অনুসরণ করেই একটি কম্পিউটার ইনপুট গ্রহণ করে, তা বিশ্লেষণ করে, ফলাফল তৈরি করে এবং তা ব্যবহারকারীর কাছে উপস্থাপন করে। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো—কম্পিউটার কয়টি ধাপে কাজ করে এবং প্রতিটি ধাপে কী ঘটে।
ইনপুট (Input) – তথ্য সংগ্রহের ধাপ
প্রথম ধাপটি হলো ইনপুট। এই ধাপে ব্যবহারকারী কম্পিউটারকে বিভিন্ন তথ্য বা নির্দেশনা দেয়। কম্পিউটার এটি বিভিন্ন ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে গ্রহণ করে।
উদাহরণস্বরূপ:
-
কীবোর্ড ব্যবহার করে লিখা
-
মাউসের সাহায্যে ক্লিক করা
-
মাইক্রোফোনে কথা বলা
-
স্ক্যানার দিয়ে ছবি ইনপুট দেওয়া
এই ধাপে মূলত তথ্য কম্পিউটারের কাছে পৌঁছায়, কিন্তু এখনো সেটি অর্থপূর্ণ বা বিশ্লেষিত নয়।
প্রসেসিং (Processing) – তথ্য বিশ্লেষণের ধাপ
ইনপুট গ্রহণের পর দ্বিতীয় ধাপে আসে প্রসেসিং। এখানে তথ্যকে কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্লেষণ বা প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
এই কাজটি করে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) বা কম্পিউটারের মূল মস্তিষ্ক। CPU-র দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ:
-
ALU (Arithmetic Logic Unit): গাণিতিক ও যৌক্তিক কাজ করে
-
CU (Control Unit): বিভিন্ন অংশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে
প্রসেসিং ধাপের ফলাফল পরবর্তী ধাপে পাঠানো হয়।
স্টোরেজ (Storage) – তথ্য সংরক্ষণের ধাপ
প্রসেসিংয়ের পর প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সাময়িক বা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এটি তৃতীয় ধাপ, স্টোরেজ। কম্পিউটার সাধারণত দুটি ধরনের স্টোরেজ ব্যবহার করে:
-
Primary Storage (RAM): অস্থায়ী মেমোরি, যা কম্পিউটার বন্ধ হলে মুছে যায়
-
Secondary Storage (Hard Disk, SSD): স্থায়ীভাবে তথ্য সংরক্ষণ করে
এই ধাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় ডেটা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
আউটপুট (Output) – ফলাফল প্রদর্শনের ধাপ
চতুর্থ ধাপ হলো আউটপুট। এখানে প্রসেস করা তথ্য ব্যবহারকারীর কাছে উপস্থাপন করা হয়।
কম্পিউটার এটি বিভিন্ন আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে করে, যেমন:
-
মনিটর: দৃশ্যমান ফলাফল দেখায়
-
প্রিন্টার: ডেটা মুদ্রণ করে
-
স্পিকার: শব্দ আকারে আউটপুট দেয়
এই ধাপেই ব্যবহারকারী দেখে বা শুনে জানতে পারেন তার নির্দেশনার ফলাফল কী হয়েছে।
ফিডব্যাক (Feedback) – পুনরায় তথ্য যাচাইয়ের ধাপ
অনেক সময় ব্যবহারকারী আউটপুট দেখার পর বুঝতে পারেন তার ইনপুট বা নির্দেশনা ভুল ছিল। তখন তিনি সংশোধিত তথ্য দিয়ে আবার ইনপুট দেন। এই পুনরাবৃত্তি বা সংশোধনের প্রক্রিয়াটিকে ফিডব্যাক ধাপ বলা হয়।
উদাহরণ: আপনি ক্যালকুলেটরে ভুল করে ৫+৫-এর জায়গায় ৫+৮ চাপলে ফলাফল দেখেই আপনি আবার ইনপুট ঠিক করে দিতে পারেন।
ফিডব্যাকের মাধ্যমে কম্পিউটার আরও নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারে।
কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ (Control) – সমন্বয় সাধনের ধাপ
শেষ ধাপে থাকে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এটি মূলত Control Unit (CU) দ্বারা সম্পাদিত হয়। এই ইউনিট পুরো প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপের সমন্বয় ঘটায়।
-
কখন ইনপুট নেয়া হবে
-
কখন প্রসেসিং শুরু হবে
-
কোন ডেটা কোথায় যাবে
-
কোন আউটপুট কোথায় দেখানো হবে
এই ধাপে পুরো সিস্টেম পরিচালিত হয় যাতে প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় এবং কোনো ভুল না ঘটে।
কম্পিউটার কাজ করে ধাপে ধাপে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়। এই প্রক্রিয়ায় মূলত ৬টি ধাপ রয়েছে—ইনপুট, প্রসেসিং, স্টোরেজ, আউটপুট, ফিডব্যাক এবং কন্ট্রোল। প্রতিটি ধাপ পরস্পরের সঙ্গে জড়িত এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একটি ধাপে যদি সমস্যা হয়, তবে পুরো কাজ বিঘ্নিত হতে পারে।
এই ধাপগুলো বুঝতে পারলে আমরা কেবল কম্পিউটারকে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারব না, বরং নিজেও প্রযুক্তিগতভাবে আরও সচেতন হতে পারব। তাই, শুধু ব্যবহার নয়, কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে, তা জানা আজকের দিনে একটি অপরিহার্য দক্ষতা।