ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া, বর্তমানে ডিজিটাল যুগে একটি সাধারণ অথচ অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। হ্যাকারের হাতে আপনার ব্যক্তিগত তথয়, ছবি এবং বন্ধু-বান্ধবের ডেটা চলে গেলে,তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আইডি হ্যাক হওয়ার সাথে সাথে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নিচে আপনার ফেসবুক আইডি পুনরুদ্ধার এবং সুরক্ষার জন্য করণীয় বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
১. দ্রুত পদক্ষেপ: ফেসবুকের My Account is Compromised পেজ
আইডি হ্যাক হওয়ার প্রথম লক্ষন দেখার সাথে সাথে আপনে ব্রাউজারে http://www.facebook.com/hacked এই ঠিকানায় যান। এই পেজটি ফেসবুক বিশেষভাবে হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারেরজন্য তৈরি করেছে।
অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করুন: “My account is compromised” (আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে) বাটনে ক্লিক করে হ্যাক হওয়া আইডিটির সাথে যুক্ত মোবাইল নম্বর বা ইমেইল অ্যাড্রেস দিন।
পুরনো পাসওয়ার্ড দিন: যদি হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেও থাকে, তবুও ফেসবুক আপনাকে একটি পুরনো বা বর্তমান পাসওয়ার্ড দিতে বলবে। আপনার শেষ মনে থাকা পাসওয়ার্ডটি লিখে চেষ্টা করুন।
২. অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার
ফেসবুক আপনাকে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কয়েকটি পথ দেখাবে। হ্যাকা তথ্য পরিবর্তন করে ফেললেও কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:
• সিকিউরিটি কোড ব্যবহার: যদি আপনার ইমেইল বা ফোন নম্বর হ্যাকার পরিবর্তন না করে থাকে, তবে ফেসবুক সেখানে একটি সিকিউরিটি কোড বা রিকভারি লিঙ্ক পাঠাবে। এই কোড ব্যবহার করে দ্রুত একটি শক্তিশালী নতুন পাসওয়ার্ড সেট করুন।
• অতিরিক্ত যাচাইকরণ (If Hacked Info is Changed): যদি হ্যাকার আপনার ইমেইল এবং ফোন নম্বর দুটোই পরিবর্তন করে ফেলে, তবে রিকভারি পেজে “Need another way to authentication?” অথবা “Submit a request to Facebook”-এর মতো অপশন খুঁজতে হবে। এই ধাপে ফেসবুক আপনার পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স) আপলোড করার মাধ্যমে আপনার আসল পরিচয় যাচাই করে অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেবে।
৩. সুরক্ষা এবং ক্লিনআপ
অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর বেশ কিছু কাজ করা অপরিহার্য যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে:
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট: অবিলম্বে একটি নতুন, জটিল এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করুন। এই পাসওয়ার্ডে বড় হাতের ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন (!, @, #, $) এর মিশ্রণ থাকতে হবে এবং এটি অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা যাবে না।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) চালু: এটি সুরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। Settings (সেটিংস) > Security and Login (নিরাপত্তা ও লগইন) অপশনে গিয়ে Two-Factor Authentication অবশ্যই চালু করুন। এটি চালু থাকলে পাসওয়ার্ড জানা থাকলেও আপনার ফোন ছাড়া কেউ লগইন করতে পারবে না।
সেশন পরীক্ষা: “Where You’re Logged In” (কোথায় আপনি লগইন করেছেন) অপশনে গিয়ে সব লগইন সেশন পরীক্ষা করুন। যদি কোনো অচেনা ডিভাইস বা স্থান থেকে লগইন দেখতে পান, তবে অবিলম্বে সেটির সেশন বাতিল বা Log Out করুন।
পোস্ট এবং মেসেজ পরীক্ষা: হ্যাকার আপনার আইডি ব্যবহার করে কোনো আপত্তিকর পোস্ট, মেসেজ বা স্প্যাম লিঙ্ক ছড়িয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করুন এবং অবিলম্বে সেগুলো ডিলিট করুন। আপনার বন্ধুদের সতর্ক করে একটি পোস্ট দিন।
৪. আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা
যদি হ্যাকের কারণে আপনার কোনো আর্থিক ক্ষতি হয় বা বড় কোনো অপব্যবহারের শিকার হন, তবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:
থানায় সাধারণ ডায়েরি (GD): নিকটস্থ থানায় গিয়ে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন।
সাইবার পুলিশ সেন্টারে যোগাযোগ: বাংলাদেশের সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে অভিযোগ জানানোর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের হটলাইন নম্বর বা অফিসিয়াল ইমেইলের মাধ্যমে সহায়তা চাইতে পারেন।
ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া একটি চাপ সৃষ্টিকারী অভিজ্ঞতা হলেও সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে ক্ষতি কমানো সম্ভব। নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন না করে, টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করেন