বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে একাধিক মোবাইল সিম ব্যবহার অনেকের জন্য সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে—কারো ব্যক্তিগত, অফিসিয়াল আবার কারো অফারভিত্তিক সুবিধা নেওয়ার জন্য একাধিক সিম থাকে। যদিও একাধিক সিম ব্যবহারে কিছু সুবিধা রয়েছে, তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি, আইনি জটিলতা ও ব্যক্তিগত তথ্য চুরির আশঙ্কা। অনেকেই এসব বিষয় না বুঝে সিম ব্যবহার করছেন, যার ফলে নিজের অজান্তেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো একাধিক সিম ব্যবহারের বিপদ ও প্রতিরোধমূলক কার্যকর ব্যবস্থা।
একাধিক সিম ব্যবহারের সম্ভাব্য বিপদ
১. ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও অপব্যবহার
বিভিন্ন অ্যাপ, ওটিপি, ব্যাংকিং তথ্য বা ফেসবুক/ইমেইলের লগইন সিমের মাধ্যমে হয়। একাধিক সিম থাকলে অনেক সময় ভুল নম্বরে OTP চলে যায় বা সিম হারালে সাইবার অপরাধীরা আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ফেলতে পারে।
২. অবৈধ কাজে ব্যবহারের ঝুঁকি
আপনার একটি সিম যদি অচেনা কেউ ব্যবহার করে, তাহলে তা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হলে আইনত দায় আপনার ওপর আসতে পারে। অনেক সময় পুরনো বা অফ হয়ে যাওয়া সিম পুনঃব্যবহার হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
৩. সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতটি সিম ব্যবহার করতে পারবেন—তা সরকারিভাবে নির্ধারিত। নিয়ম লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত সিম রেজিস্টার করলে সেটা আইনি অপরাধের আওতায় পড়তে পারে।
অতিরিক্ত সিম ব্যবহারের বাস্তব সমস্যা
১. ব্যয় ও ম্যানেজমেন্টের অসুবিধা
প্রতিটি সিমের জন্য আলাদা ব্যালান্স, ডেটা অফার, রিচার্জ, মেয়াদ ইত্যাদি দেখা রাখা কঠিন। এতে সময়, টাকা এবং মনোযোগ—সব কিছুর অপচয় হয়।
২. বিভ্রান্তি ও যোগাযোগ সমস্যার সৃষ্টি
একাধিক সিম ব্যবহারে বন্ধুরা বা ক্লায়েন্টরা বুঝে উঠতে পারে না কোন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। তাছাড়া জরুরি সময় ভুল নম্বরে কল করে সঠিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগে বিলম্ব ঘটে।
৩. সিম রেজিস্ট্রেশনের গড়মিল
বেশিরভাগ মানুষ জানেন না তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কতটি সিম রেজিস্টার করা আছে। ফলে অজান্তে কারও নামে সিম নিবন্ধিত হয়ে যেতে পারে, যা পরবর্তীতে আইনি ঝামেলায় রূপ নেয়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও করণীয়
১. নিজের নামে রেজিস্টার করা সিমই ব্যবহার করুন
আপনার ব্যবহৃত প্রতিটি সিম আপনার নিজস্ব এনআইডি দিয়ে রেজিস্টার করা হয়েছে কি না তা *16001# ডায়াল করে যাচাই করুন। অন্যের নামে সিম থাকলে তা দ্রুত বদল করুন।
২. ব্যবহার না হওয়া সিম নিষ্ক্রিয় করুন
যে সিমগুলি মাসের পর মাস ব্যবহার করছেন না, সেগুলো বন্ধ করুন। এগুলো অপব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে।
৩. সিমে PIN ও ফোনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করুন
সিমে PIN কোড ও ফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট/পাসওয়ার্ড রাখুন যেন ফোন চুরি হলে তথ্য সহজে উদ্ধার করা না যায়।
৪. সিম রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নিয়ম জানুন
বিটিআরসি (BTRC) নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে একজন ব্যবহারকারীর জন্য সর্বোচ্চ ১৫টি সিম রেজিস্টার করার সুযোগ আছে (একই এনআইডিতে)। এর বেশি সিম থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বা সাসপেন্ড হতে পারে।
৫. প্রয়োজনে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন
আপনার সিম বা এনআইডি-সংক্রান্ত কোনো সন্দেহ থাকলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন। তারা আপনার সিম স্ট্যাটাস নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
একাধিক সিম ব্যবহার করা যতটা সুবিধাজনক মনে হয়, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হতে পারে যদি না আমরা সচেতন হই। একটি সিম হারিয়ে গেলে বা ভুল নামে রেজিস্টার করা থাকলে তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। তাই সব সময় নিজের নামে রেজিস্টার করা সীমিত সংখ্যক সিম ব্যবহার করুন, প্রয়োজনে অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করে দিন এবং তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। সচেতনতাই একমাত্র পথ নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহারের।