বর্তমান ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশের নাগরিকরা ঘরে বসেই অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। আগে যেখানে পাসপোর্ট করতে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতো, এখন সেই ঝামেলা নেই। বাংলাদেশ সরকার ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করার পর থেকে আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ, দ্রুত ও স্বচ্ছ হয়েছে। ২০২৫ সালে এই প্রক্রিয়ায় কিছু নতুন নিয়ম ও আপডেট যুক্ত হয়েছে যা প্রতিটি আবেদনকারীর জানা জরুরি।
এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরব।
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার ধাপসমূহ
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করতে হলে প্রথমে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়।
-
রেজিস্ট্রেশন তৈরি করা
-
ই-পাসপোর্টের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর “Apply Online” অপশনে ক্লিক করতে হবে।
-
সেখানে আপনার নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) তথ্য দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
-
-
আবেদন ফর্ম পূরণ করা
-
লগইন করার পর পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম আসবে। এখানে নাম, ঠিকানা, অভিভাবকের তথ্য, জন্মস্থানসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
-
ফর্ম পূরণে কোনো ভুল হলে আবেদন বাতিল হতে পারে, তাই সাবধানে তথ্য প্রদান করা জরুরি।
-
-
ডেলিভারি টাইপ নির্বাচন করা
-
নরমাল, এক্সপ্রেস এবং সুপার এক্সপ্রেস – এই তিন ধরণের সেবা থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
-
ডেলিভারি টাইপ অনুযায়ী ফি ও ডেলিভারির সময় ভিন্ন হয়ে থাকে।
-
-
ফি প্রদান করা
-
অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করার পর নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
-
ফি প্রদান করা যায় সোনালী ব্যাংক, বিকাশ, নগদ বা অন্য অনুমোদিত মাধ্যমে।
-
-
অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং
-
ফি প্রদানের পর নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক এবং ছবি তোলার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে।
-
নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, স্বাক্ষর ও ছবি দিতে হবে।
-
পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ২০২৫
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার সময় নিচের কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে:
-
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্মনিবন্ধন সনদ।
-
শিক্ষার্থী হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড।
-
চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে চাকরির পরিচয়পত্র।
-
বর্তমান ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি)।
-
পূর্বে কোনো পাসপোর্ট থাকলে তার কপি।
পাসপোর্ট ফি ও ডেলিভারি সময় ২০২৫
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের ফি নির্ভর করে মেয়াদ এবং পাতার সংখ্যা অনুযায়ী।
-
৫ বছরের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার নরমাল ডেলিভারি – প্রায় ৪,০২৫ টাকা
-
৫ বছরের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার এক্সপ্রেস ডেলিভারি – প্রায় ৬,৩২৫ টাকা
-
৫ বছরের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি – প্রায় ৮,৬২৫ টাকা
-
১০ বছরের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার নরমাল ডেলিভারি – প্রায় ৫,৭৫০ টাকা
ডেলিভারি সময় সাধারণত নরমাল ২১ দিন, এক্সপ্রেস ১০ দিন এবং সুপার এক্সপ্রেস ২-৫ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে অফিসের ব্যস্ততা অনুযায়ী সময় কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার সুবিধা
২০২৫ সালের আপডেট নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে:
-
ঘরে বসে সহজে আবেদন করা যায়।
-
লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা নেই।
-
অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে আবেদন স্ট্যাটাস জানা যায়।
-
স্বল্প সময়ে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া সম্ভব।
-
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য আধুনিক ই-পাসপোর্ট আরও নিরাপদ।
বাংলাদেশে অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন এখন অত্যন্ত সহজ ও সময় সাশ্রয়ী একটি প্রক্রিয়া। ২০২৫ সালে নতুন নিয়ম যুক্ত হওয়ায় আবেদন প্রক্রিয়া আরও উন্নত হয়েছে। তাই যারা নতুন পাসপোর্ট করতে চান বা পুরোনো নবায়ন করতে চান, তারা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দ্রুত সেবা পেতে পারেন। সঠিক তথ্য প্রদান এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখলে পাসপোর্ট পেতে কোনো সমস্যা হবে না।