বর্তমান ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে উঠেছে। স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে এখন আমাদের লোকেশন, ডেটা, এবং যোগাযোগ সবকিছুই অনলাইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেকেই মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে কারও অবস্থান জানার চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ বুঝতেই পারেন না যে তাদের মোবাইল ফোনটি ট্র্যাক করা হচ্ছে।
এই আর্টিকেলে আমরা জানবো মোবাইল ট্র্যাকিং কীভাবে করা যায়, কোন কোন অ্যাপ বা পদ্ধতি ব্যবহার হয় এবং যদি আপনার মোবাইল কেউ ট্র্যাক করে থাকে তবে তা বোঝার উপায় কী কী।
মোবাইল ট্র্যাকিং কী এবং কেন করা হয়?
মোবাইল ট্র্যাকিং বলতে বোঝায় একটি মোবাইল ফোনের বর্তমান অবস্থান বা গতিবিধি নির্ধারণ করা। এটি সাধারণত GPS, মোবাইল নেটওয়ার্ক, বা ওয়াইফাই ডেটার মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।
মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের উদ্দেশ্য হতে পারে:
-
হারিয়ে যাওয়া ফোন খুঁজে পাওয়া
-
শিশু বা পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
-
কর্মীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ
-
সন্দেহভাজন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ
আইনগত উদ্দেশ্যে ট্র্যাকিং বৈধ হলেও অনুমতি ছাড়া কারও মোবাইল ট্র্যাক করা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে এবং তা আইনত অপরাধও হতে পারে।
মোবাইল ট্র্যাক করার জনপ্রিয় পদ্ধতি
● Google Find My Device
Android ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য Google-এর এই ফিচারটি খুবই কার্যকর। যদি ফোনে Gmail একাউন্ট লগইন করা থাকে এবং ইন্টারনেট চালু থাকে, তবে https://www.google.com/android/find এই লিংকে গিয়ে ফোনের লোকেশন দেখা যায়।
● Apple Find My iPhone
iPhone ব্যবহারকারীদের জন্য Apple-এর Find My অ্যাপ ব্যবহার করে ফোন ট্র্যাক করা যায়। iCloud অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনি যেকোনো ডিভাইস থেকে আপনার আইফোন খুঁজে পেতে পারবেন।
● Third-party অ্যাপস
অনেক থার্ড-পার্টি অ্যাপস যেমন Life360, mSpy, Famisafe, GeoZilla ইত্যাদিও মোবাইল ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এসব অ্যাপের মাধ্যমে পরিবার, শিশু, বা কর্মীর অবস্থান রিয়েল টাইমে দেখা যায়।
নিজের ফোন ট্র্যাক করা হচ্ছে কিনা বোঝার উপায়
অনেক সময় আপনার অজান্তেই কেউ আপনার ফোন ট্র্যাক করতে পারে। নিচের লক্ষণগুলোর মাধ্যমে আপনি তা বুঝতে পারেন:
-
অস্বাভাবিক ব্যাটারি ড্রেইন: অজানা অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকলে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
-
ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার বেড়ে যাওয়া: লোকেশন শেয়ারিং অ্যাপস গোপনে ডেটা ব্যবহার করে।
-
অজানা অ্যাপ বা ফাইল ইনস্টল হওয়া: যদি আপনি দেখেন যে কিছু অচেনা অ্যাপ বা ফাইল মোবাইলে আছে, তাহলে সাবধান হওয়া উচিত।
-
ফোনের গতি কমে যাওয়া বা হ্যাং করা: স্পাই অ্যাপস গোপনে অনেক RAM ব্যবহার করে, ফলে ফোন স্লো হয়ে যায়।
-
গোপনভাবে ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন চালু হওয়া: এগুলো সাধারণত ফোন ট্র্যাকিং বা নজরদারির ইঙ্গিত দেয়।
ট্র্যাকিং থেকে নিজের মোবাইল কিভাবে নিরাপদ রাখবেন?
-
সবসময় মোবাইলের লোকেশন সার্ভিস অফ রাখুন যদি প্রয়োজন না হয়।
-
অজানা বা সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
-
ফোনে ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
-
Settings > App permissions এ গিয়ে কোন অ্যাপ লোকেশন, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন অ্যাক্সেস পাচ্ছে তা নিয়মিত চেক করুন।
-
Two-Factor Authentication চালু রাখুন Gmail বা iCloud অ্যাকাউন্টের জন্য।
-
সময় সময় ফোন রিস্টার্ট বা ফ্যাক্টরি রিসেট করুন যদি সন্দেহ হয়।
মোবাইল ট্র্যাকিং একদিকে যেমন নিরাপত্তার জন্য সহায়ক, তেমনি এটি গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মাধ্যমও হতে পারে। তাই এই বিষয়ে সঠিক সচেতনতা এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। নিজের ফোন নিরাপদ রাখতে সবসময় নিরাপত্তা সেটিংস আপডেট রাখুন এবং অজানা কিছু ইনস্টল বা অনুমোদন দেওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করে নিন।
স্মার্টফোনের যুগে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখাই আমাদের সবার দায়িত্ব। সচেতন থাকুন, প্রযুক্তিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করুন।